Laura Mohiuddin

ছবি
Laura Mohiuddin Digital Marketing Strategist & Lead 15+ years driving SEO-led growth, analytics, and cross-functional delivery. Photographer and storyteller behind Pixcellent Photography .  Based in Dhaka, serving U.S. clients. Available for strategy, audits, and growth mandates. Learn more about Laura Mohiuddin

মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ফটোজার্নালিস্ট রঘু রায়ের সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর| Friends of Liberation Raghu Rai's recent visit to Bangladesh

ভারতীয় ফটোজার্নালিস্ট ও মর্যাদাসম্পন্ন ম্যাগনাম ফটোর সদস্য রঘু রায় - বাংলাদেশীদের কাছে যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ছবিগুলোর জন্য সমধিকপরিচিত, যাঁকে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে সম্প্রতি সফর করে গেলেন বাংলাদেশ দৃকের ছবিমেলার সৌজন্যে। 

Bangladesh. 1971. The Price of Freedom
রঘু রায়ের (Raghu Rai) জন্ম ১৯৪২ সালে ঝাং নামের এক ছোট্ট গ্রামে যা এখন পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। ফটোগ্রাফি শুরু করেন ১৯৬৫ সালে আর পরের বছরই স্টেটসম্যান (Statesman) পত্রিকায় চীফ ফটোগ্রাফার হিসাবে যোগদান করেন। হেনরি কারতিয়ে ব্রেসওঁ (Henri Cartier-Bresson) ওনাকে ১৯৭৭ সালে ম্যাগনামে যোগদানে আহবান জানান ১৯৭২ সালে প্যারিসে হওয়া প্রদর্শনীতে রায়ের কাজ দেখে। ১৯৭৬ সালে স্টেটসম্যান ছাড়ার পর রায় কাজ করেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'সানডে' (Sunday) নামের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে পিকচার এডিটর হিসাবে। ১৯৮০ সালে সেটিও ছেড়ে যোগদেন ইন্ডিয়া টু’ডেতে (India Today) পিকচার এডিটর/ভিজুয়ালাইজার/ফটোগ্রাফার হিসাবে এর বাল্যবেলায়, যা আজ ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ম্যাগাজিন। তিনি ওখানে ১৯৮২-১৯৯১ পর্যন্ত কাজ করেছিলেন বিশেষ সংখ্যা আর ডিজাইনগুলোতে যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক থিম নিয়ে নিত্য নতুন ধারনামুলক কাজ করতেন যা ছবিরচনা হিসাবে প্রকাশিত হত ও যার অনেকগুলোই জাতীয় আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। গত আঠারো বছর ধরে রায় ভারতব্যাপী বিষয়াবলীর উপর বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন।

কিভাবে ওনার ফটোগ্রাফিতে যাত্রা শুরু হল?

বাবার ইচ্ছায় হয়েছিলেন একজন সিভিল এঞ্জিনিয়ার । দেড় বছর সরকারী চাকুরী করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। বুঝতে পারছিলেন না কি করবেন।

গেলেন পরলোকগত এগার বছরের বড় ভাই বিখ্যাত ফটোগ্রাফার এস পালের (S Paul) কাছে। যখন তার কাছে গিয়েছিলেন তখনও বুঝতে পারছিলেন না কি চান জীবনে তিনি।

পালের সাথে থাকার সময় দেখতেন, অনেক ফটোগ্রাফারই আসতেন তাঁর কাছে। আলোচনা করতেন, লেন্স, ছবি, ধারনা নিয়ে আর তিনি অবাক হয়ে ভাবতেন, কত আশ্চর্যের বিয়য়ই যে. পাল সাহেবের একজন বন্ধু গ্রামে যাচ্ছেন ছবি তুলতে। উনিও সংগী হতে চাইলেন। ভেবেছিলেন একটা হলিডে হয়ে যাবে। উনি বুঝতে পারেন নি যাবার ক্ষণে কি হয়েছিল তাঁর,এস পাল সাহেবের কাছে একটা ক্যামেরা চেয়ে নিলেন। উনি ছোট এক ক্যামেরায় ফিল্ম ভরে দিয়ে আর একটু এক্সপোজার কি বুঝিয়ে দিলেন।

প্রথম ছবি তুললেন গ্রামের পথে একটা বাচ্চা গাধার। দেখেছিলেন এক বাচ্চা গাধা দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্ষেতের মাঝখানে। চাইলেন কাছে গিয়ে একটা ছবি তুলতে। গাধা লাগাল দৌড়। উনিও ছুটলেন পেছন পেছন। একসময় গাধার বাচ্চা ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কাছে গিয়ে তুলে নিলেন ছবি। তোলা হয়েছিল নরম আলোতে যেখানে পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডটা ছিল ঝাপসা। 


১৯৬৫ থেকে ৭১/৭২ সাল পর্যন্ত লন্ডনের টাইমস পত্রিকা প্রতি উইকএন্ডে আধাপাতা ছবি ছাপাত যা হতে হত মজার, অদ্ভুত ও ব্যতিক্রমী। উনার ভাই ওখানে ছবি পাঠাতেন নিয়মিত। যখন উনি ওই গাধার ছবিটা পাঠিয়েছিলেনওরা ওটা ছাপিয়েছিল। টাকাও দিয়েছিল বেশ কিছু রায়ের নাম পরিচয় প্রকাশের পাশাপাশি। যা টাকা পেয়েছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পেরেছিলেন পুরো একমাস। সবাই বলছিল যে ওনার ছবি ছাপানো এক বিরাট ঘটনা আর তিনিও ভাবলেন একবার ফটোগ্রাফিতে হাত লাগিয়ে দেখতে ক্ষতি কি! 

Raghu Rai. India. 2007
একজন পাশ করা সিভিল এঞ্জিনিয়ার হয়ে উনি ফটোগ্রাফিতে নামবেন, বাবা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর বড়ভাইও ছিলেন ফটোগ্রাফার। ওনার বাবাকে যখন কেউ জিজ্ঞেস করত, কয় ছেলে তাঁর বলতেন চারজন, তার মধ্যে দুটো ফটোগ্রাফার হয়ে গেছে যেন বোঝাতে চাইতেন।

তাঁর সময় কিশোর পারেখ (Kishor Parekh), এস পাল ও রঘুবির সিং (Raghubir Singh) ছিলেন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার। কিশোর ছিলেন দশ বছরের বড়। সবাই ছিলেন বিখ্যাত। কিশোর ছিলেন হিন্দুস্তান টাইমসের চীফ ফটোগ্রাফার। পাল ছিলেন এক্সপ্রেসে। রঘু রায় যোগ দিলেন স্টেটসম্যান এ। আর এক বছরের মাথায়ই হয়ে গেলেন চীফ ফটোগ্রাফার। এই তিনজন ছিলেন আবার খুব ভাল বন্ধুও। রায় যখন কাজে দেখতেন তাদের, ঠাট্টা করে বলতেন, ছাড়বনা তোমাদের। 


এরকম দুইজন বিখ্যাত লোকের মাঝে কাজ করতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হত তাকে। 'এরকম ব্যক্তিদের মাঝে কাজ করতে গিয়ে হয় আপনি চিঁড়ে চ্যপ্টা হবেন অথবা বেরিয়ে আসবেন। আমার ক্ষেত্রে আমি মনে হয় বেরিয়ে উঠতে পেরেছি', বলেছিলেন তিনি।

ওই সময় ম্যাগাজিনের প্রাধান্য ছিল। বেশিরভাগ ফটোগ্রাফার কাজ করতেন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে। বিষয়বস্তুও ছিল কম। রাজনীতে, সেলেব্রিটিরা বা প্রকৃতি। ওই সময়টা ভারতীয় উপমহাদেশে ছবির জগত ছিল এরকমই নিষ্প্রান। সুন্দর সুন্দর প্রকৃতির ছবি, বৃদ্ধদের মুখের ভাঁজ পড়া ছবি বা সুন্দরী মহিলা বা বাচ্চাদের খুব কাছ থেকে তোলা ছবিই ছিল ওই সময়ের স্টাইল।

BANGLADESH. 1971. Bangladesh. 1971. স্টেটসম্যানের চীফ ফটোগ্রাফার হিসাবে ওনার নিজেরই দায়িত্ব ছিলে এসাইনমেন্টগুলো ভাগ করে দেয়া। উনি ছিলেন দিল্লীতে। আর হেডঅফিস ছিল কলিকাতা। যখন শরণার্থীরা আসা শুরু হল একজন রিপোর্টারকে দিয়ে ওনাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল সীমান্তে। ওনারা যশোর পর্যন্ত চলে গেলেন পাকিস্তানী সেনারা চলে যাবার পর। মুক্তিবাহীনীর ছবি তুলেছেন। গরীব লোকগুলো রাইফেল তুলে ধরে আছে। কেউই এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। পাকিস্তানীর পেছনে কিছুই ফেলে রেখে যায় নি এদের জন্য। ছবি তুলেছিলেন শরণার্থীদের তাঁদের দিকে এগিয়ে আসার। ছবি তুলেছিলেন বাংলাদেশিদের রিক্সায় করে পরিবার নিয়ে চলেছে। ভাংগা পুল এরকম আরো অনেক কিছুর। তারপর সবাই যখন ভারতের দিকে যাত্রা শুরু করল তখন ছবি তুলেছিলেন ক্যাম্পগুলোর।
BANGLADESH. 1971. A wounded and unconcious Pakistani soldier being brought by the Indian Army.
যুদ্ধে নারী আর শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপদ্গ্রস্ত হয় আর এ জন্যই তুলেছেন মহিলা আর শিশুদের প্রচুর ছবি।

স্টেটসম্যান ছেড়ে যাবার সময় সবগুলো নেগেটিভ নিয়ে গিয়েছিলেন সাথে করে। রেখেছিলেন অপ্রকাশিত এই নেগেটিভগুলো বাক্সের ভেতর। তারপর হারিয়ে ফেলেছিলেন। অনেকদিন পর যখন নিজের সব ছবিগুলোকে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে গেলেন খুঁজে পেলেন ওগুলো। রয়েছে নিয়াজীর আত্মসমর্পণের কালের ছবিও।
BANGLADESH. 1971. Instrument of surrender.
Bangladesh. 1971. Instrument of Surrender


ভারতের দিকে আগত অনেক বাংলাদেশি শরনার্থীদের অনেক ছবিই তুলেছিলেন যা ছিল মন ভেংগে দেবার মত। ওরকম বিশটি আর তাঁর নিজের আরো পঞ্চাশটি ছবি নিয়ে দেল পিয়েরোর (Del Piero) গ্যালারিতে প্রদর্শনী হয়েছিল ১৯৭২ এ।

সেখানে দেখলেন এক ব্যাক্তি লাইকা (Leica) ক্যামেরা হতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখতে লাগছে ব্রেসওঁ'র (Bresson) মত। গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি ব্রেসওঁ? লাইকাওয়ালা বললেন, হ্যা।

আর আপনি কি এই ছবি গুলোর ফটোগ্রাফার, জিজ্ঞেস করলেন ব্রেসওঁ। রায় বললেন, হ্যাঁ, তিনিই ফটোগ্রাফার।

ব্রেসওঁ তখন তাকে বললেন, আচ্ছা, আগে ছবি গুলো দেখেন নিই। তারপর আসছি আপনার কাছে।

ছবি দেখে এসে বললেন, ভাল হয়েছে। দাওয়াত দিলেন ঘরে ডিনারের।

তারপর ভারতে ফিরে এসে পেলেন ম্যাগনাম প্যারিসের সদস্যপত্র। ভয় পেয়ে গেলেন। কিভাবে কাজ করবেন এরকম রথী মহারথীদের সাথে। ভয়ে জবাবই দিলেন না। কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন স্টেটসম্যানে। ওই সময় ওটা ছিল ভারতে সবচেয়ে বড় পত্রিকা। ৭৭ সালে পত্রিকা ছাড়লেন। পুরানো কাগজপত্র ঘাটতে গিয়ে পেলেন সেই আমন্ত্রণপত্র। যোগাযোগ করলেন ম্যাগনামের সাথে। ওরা জানাল ওরা ওনাকে সানন্দে নেবে। যেখানে লোকজনকে কত পরিশ্রম করতে হয় ম্যাগনামে যেতে, সেখানে তাঁকে কিছুই করা লাগেনি।
Mother Teresa
Mother Teresa at her refuge of the Missionaries of Charity in Calcutta.During prayer.

ছবি তোলার সময় তাঁর মাথায় অন্য কোন পরিকল্পনা কাজ করেনা.যেমন ইন্দিরা গান্ধীকে দেখায় খুব রাগী আর মাদার তেরেসা কে খুব নরম ওটা তিনি ইচ্ছা করে করেন না বলেন, তিনি ছবির পারিপার্শ্বিকতা যেমন তেমনই ধরেন, তিনি। ফটোগ্রাফিই তাঁর নেশা ধর্ম এটাই তাঁকে শিখিয়েছে জীবন সম্পর্কে. শিখেছেন প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর জীবনটা পুর্ণতায় ভরে গেছে এর কারনে নিজেকে একজন অভিযাত্রী মনে করেন আর এখনো বেড়ে উঠে চলেছেন নিজেই 
এর পরবর্তী ব্লগটি হবে "বিগিনারদের জন্য ফটোগ্রাফি: একটি সম্পূর্ণ গাইড"। 
আপডেটেড থাকতে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্রাণী প্রেমের নামে আমাকে হত্যা করা হয়েছে - মলি (২০১৭ - ১১ জুন, ২০২০)

৭টি মাস্টার কম্পজিশন যা আপনার অবশ্যই চেষ্টা করা উচিৎ একজন বিগিনার ফটোগ্রাফার হিসেবে